Purchase!

প্রেমের কবিতা

তবে বলি, কেন গালিবের কবিতা ভালো লাগে। প্রথমত তার কবিতা শ্রম্নতিমধুর, পাঠমধুর। পড়তে পড়তে বেশ কিছু ছবি, বেশ কিছু দোলা এসে লাগে, মনে অথবা মগজে। গালিব অতি চতুর কবি, ঠিক আমাদের মহল্লার শিল্পী নামের মেয়েটির মতো, নিপুণ চতুরতায় যে সবার মনেই দোলা দিয়ে যায়। এমন তো নয় যে সে বিরাট সুন্দরী, কিন্তু সৌন্দর্যের চেয়েও বড় গুণ অথবা ছলনা হলো, সে সবাইকে একটা আপন করে নেয়ার ছল দেখায়। এইটুকু ছল গালিবের কবিতাতেও প্রবল।
By সোহেল হাসান গালিব
Category: কবিতা
Paperback
Ebook
Buy from other retailers
About প্রেমের কবিতা
তবে বলি, কেন গালিবের কবিতা ভালো লাগে। প্রথমত তার কবিতা শ্রম্নতিমধুর, পাঠমধুর। পড়তে পড়তে বেশ কিছু ছবি, বেশ কিছু দোলা এসে লাগে, মনে অথবা মগজে। গালিব অতি চতুর কবি, ঠিক আমাদের মহল্লার শিল্পী নামের মেয়েটির মতো, নিপুণ চতুরতায় যে সবার মনেই দোলা দিয়ে যায়। এমন তো নয় যে সে বিরাট সুন্দরী, কিন্তু সৌন্দর্যের চেয়েও বড় গুণ অথবা ছলনা হলো, সে সবাইকে একটা আপন করে নেয়ার ছল দেখায়। এইটুকু ছল গালিবের কবিতাতেও প্রবল। সে সুতীক্ষ্ণভাবে ছন্দের দোলাচল, শব্দের কারুকৌশল আর দৃশ্যকল্পের মোহমায়া সৃষ্টি করে। সেইসব মায়ায় আমার মতো নাদান পাঠক আটকা পড়ে যায়। গালিবের কবিতা মোহনীয়, মধুর এবং চতুর। সচরাচর এই শব্দটির উচ্চারণে শেয়াল নামের যে প্রাণীটি চোখে ভাসে তাকে এখানে টেনে আনলে চলবে না, এখানে বোধহয় চতুর বলতে আমি চৌকস শব্দটাই বলতে পারতাম কিংবা ইংরেজিতে যাকে বলে স্মার্ট। কিন্তু কেন চতুর বললাম? কারণ আমিও একটু ছল করলাম, অন্য ইশারা দিলাম, ভিন্ন তর্কের সুযোগ করে দিলাম। বিশ্বাস করি, এই অন্য ইশারা, ভিন্ন মাত্রা দেয়াও কবি সোহেল হাসান গালিবের একটি নিজস্ব ব্র্যান্ড কৌশল। গালিব এমনই কৌশলী যে প্রায়শই বিপদজনক। এই যে সামান্য একটা মার্বেলের স্মৃতি আমাদের শৈশব—কৈশোরে মিশে আছে সেই নিরীহ মার্বেল গড়াতে গড়াতে চলে যায় কোনো এক নির্জন নাভিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জীবনানন্দের ‘নগ্ন নির্জন হাত’—এর চেয়ে ‘নির্জন নাভি’ অনেক বেশি গভীর আর কামোদ্দীপক। গালিবের কবিতার কামটুকুও আমার ভালো লাগেজ্জ

ছোট্ট একটা মার্বেল হলেই সবচেয়ে ভালো হতো,
ভালো হতো তোমার সম্মতিটুকু পেলেজ্জ

গড়িয়ে গড়িয়ে এসে নামতাম ওই
নির্জন নাভিতে।
— মার্বেল

আপাত নিরীহ বস্তুকে ভয়ঙ্কর করতে পারার কৌশল শুধু হন্তারকই জানে তা নয়, কবিও জানে। গালিব সেই জাতের কবি যে বিনা রক্তপাতে খুন করে ফেলতে পারে অথবা খুন হয়ে যেতে পারেজ্জ

খুনও তো সম্ভব রক্তপাত বিনা। সূর্যাস্তের আগে
অনেক অনেক দিন পর আজ বৃষ্টিতে দুচোখ ধুয়ে দেখি
একটি আঁচলে আঁকা ফুল ঝরে পড়ছে ধীরে, নিঃশব্দে
দূরে বসে থাকা ওই ফড়িঙের ফুঁয়ে।
— ফুঁ

ওই যে বলছিলাম দৃশ্যনির্মাণ, আমি যেন দেখতে পেলাম কারো আঁচলে আঁকা একটি ফুল ঝরে পড়ছে একটি ফড়িঙের ফুঁ পেয়েই। এই দৃশ্য নির্মাণের ক্ষমতা গালিব কি হাইকু— ওস্তাদদের—কাছ থেকে পেয়েছেন? তারা যেমন ন্যূনতম শব্দে বৃহত্তর দর্শন আর দৃশ্য আঁকতে পারেন, সেই ক্ষমতা গালিবেরও আছে।

শব্দের ব্যবহারে পরিমিতিবোধ, শব্দ—নির্বাচনে ভীষণ রকমের সচেতন গালিব আদতে কবিতা নির্মাণ করেন অতীব যত্নে। শব্দ নিয়ে বেশ একটা জাগলিং করার ক্ষমতা তার আছেজ্জ

রোদসী শব্দের মধ্যে
রোদ কিন্তু নেই এক ফেঁাটা।
অথচ তা উচ্চারণ মাত্র
ঝলমল করে উঠছে তোমার মুখ।

ভাষা এমনই।
হৃদয় তো উজবুক।
— তসরুফ

গালিবের কবিতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আরেকটি জরুরি বিষয় এসে যায় ছন্দনির্মাণ। গালিব একজন সুদক্ষ রাজমিস্ত্রির মতো ছন্দকে গড়েন এবং ভাঙেন। মিল এবং অমিলের এক অদ্ভুত চলন তিনি তৈরি করেন, কবিতার শরীরের বাঁকগুলো তাতে আরো মনোহর হয়জ্জ
ফুটেছে নাইন—ও—ক্লক।

আজও কি তোমার ক্লাস নেই!
কলেজ কি বন্ধ!

রাস্তা ব্লকজ্জ
— মেট্রোরেল

কখনো উত্তরাধুনিকদের মতো গালিব কবিতায় একদম পুরনো কোনো টেক্সটকে বিনির্মাণ করেন। মধুসূদন কি গালিবের প্রিয় কবি? নাকি জীবনানন্দ? নাকি নজরুল? আমি ঠিক জানি না। তবে অনেক সময়ই দেখতে পাই গালিব অকাতরে হাত পাতেন আমাদের অগ্রজ ওস্তাদ

কারিগরদের। শব্দের জন্য, ছন্দের জন্য সদা—উন্মুক্ত, ব্যগ্র কবি গালিব তার কবিতায় বসিয়ে দেনজ্জ‘‘তবুও কী ত্রস্তেজ্জঅস্তে গেলা দিনমণি’’ (আপেলকুমারী), ‘‘দিন যায় এবে ছদ্মবেশেজ্জ’’ (অনায়ত্ত) জ্জধরনের বাক্য।

শব্দ—ছন্দ—নির্মাণজ্জএ সব নিয়ে তো কথা হলো, এবার বলে ফেলি গালিবের কবিতার প্রেমের কথা বা প্রেমিকার কথা। গালিবের প্রেমিকার চুল তো চাবুক। বোদলেয়ারের মতো চুল নিয়ে তারও দেখি তীব্র তাড়না আছে। সে তাড়নার তোড়ে প্রেমিকা কখনো সর্বনেশেজ্জ

আগুন জ্বালাও চোখেজ্জকৃষ্ণচূড়া ফুল সে নাজ্জ
মুখে চালাও চাবুক এবং চুলেও।
— কুণ্ডলিনী

মধু—র নিকটে গিয়ে হঠাৎ ফুটেছে আমারও শরীরে হুল। তুমি ফেলে গেছ পথে সুরভি সমেতজ্জকদম—কেশর, চুল...
— মধু—র নিকটে গিয়ে

এইসব কদম—কেশর চুল, চাবুক চুল নিয়েও আহা, প্রেমিকা পলাতকজ্জ

অলকে অলকানন্দা
পলকে ঝলক দিয়ে
কোথায় লুকালে তুমি
পাতার আড়ালে গিয়ে
— অলকানন্দা

গালিবের সকল প্রেমের কবিতার বুনন এক সময় পলাতক প্রেমিকার দিকে যেতে থাকে, যেতে চায়। কেননা, প্রেমিকা চলে যায়, প্রেম তবু রয়ে যায়, প্রেমিকা কবিতা, সে প্রায়শই অমর। অন্তত গালিবের প্রেমের কবিতা প্রায়শ অমর।

মুম রহমান
Creative Dhaka
  • Copyright © 2024
  • Privacy Policy Terms of Use